নোয়াখালীর গানের সম্রাট অধ্যাপক মোহাম্মদ হাশেমের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।
দেশে করোনা মহামারির বৃদ্ধি পাওয়ায় ২৩ মার্চ প্রথম প্রয়াণ দিবসে তাকে স্মরণে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও মোহাম্মদ হাশেম ফাউন্ডেশন কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে।
মোহাম্মদ হাশেম ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব মুস্তফা মনওয়ার সুজন জানান, শিল্পীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মঙ্গলবার নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীর দত্তের হাটে শিল্পীর বাসভবন হাসু ভিলায় বাদ জোহর দোয়া মাহফিল। বাদ আসর মাইজদী কোর্ট মসজিদের পাশে মোহাম্মদ হাশেমের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও মোনাজাত।
মাইজদীর নতুন বাস স্ট্যান্ডের পেছনে জিনাত মঞ্জিলে সন্ধ্যায় শিল্পীর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান ‘কথা ও গান’। এতে সভাপতিত্ব করবেন মোহাম্মদ হাশেম ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কাজী খসরু।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, নোয়াখালী শাখার সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন কৈশোর জানান, বিকেল ৪টায় শিল্পীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। পরে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে মোহাম্মদ হাশেম স্মরণ সভার আয়োজন করা হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, নোয়াখালী শাখার সভাপতি বিমলেন্দু মজুমদার।
এ ছাড়া চ্যানেল নোয়া ভিশনের ভার্চুয়াল প্রোগ্রাম ‘মোহাম্মদ হাশেমের জীবন ও গান’ হবে রাত ১০টায়।
অধ্যাপক মোহাম্মদ হাশেম চার দশক নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান নিয়ে গবেষণা করেছেন। লিখেছেন দেড় হাজারের বেশি গান। নিজেই গেয়েছেন বেতার-টেলিভিশনে।
নোয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষাকে সংগীতে রূপান্তর করে পেয়েছেন ব্যাপক পরিচিতি। শুধু নোয়াখালীর আঞ্চলিক গানই নয়, তিনি লিখেছেন পাঁচ শতাধিক পল্লীগীতিও।
মোহাম্মদ হাশেম ১৯৪৭ সালের ১০ জানুয়ারি নোয়াখালী সদর থানার চরমটুয়া ইউনিয়নের শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নিজ গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিয়াজ মোহাম্মদ হাইস্কুলে মাধ্যমিক পাশ করে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সনদপ্রাপ্ত হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই তিনি গানের জগতে পরিচিত হতে থাকেন। সংগীতেও তার উচ্চতর ডিগ্রি রয়েছে। লোকসঙ্গীত সম্রাট শিল্পী আবদুল আলীম তার সংগীত গুরু। ঢাকা মিউজিক কলেজে সংগীতে ডিগ্রি নেয়ার পর তিনি সেখানেই বাংলা বিভাগ ও সঙ্গীতের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে মোহাম্মদ হাশেম নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় গান লিখতে শুরু করেন। এর আগে নোয়াখালী অঞ্চলের কোনো গান ছিল না বললেই চলে। তার হাতেই এ অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষা, আনন্দ-বেদনা, মেঘনা পারের মানুষের সংগ্রামী জীবনাচার সংগীতে রূপ নেয়। তার অধিকাংশ গান সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।
নোয়াখালীর প্রধান সংগীত খ্যাত ‘আঙ্গো বাড়ি নোয়াখালী রয়াল ডিস্ট্রিক ভাই/ হেনী মাইজদী চৌমুহনীর নাম কে হুনে নাই’-গানটি তাকে এনে দিয়েছিল জগতজোড়া খ্যাতি। এ গান আজও মানুষের মুখে মুখে।
তার জনপ্রিয় অন্যান্য গানের মধ্যে রয়েছে, ‘আল্লায় দিসে বাইল্লার বাসা নোয়াখাইল্লা মাডি’; ‘নোয়াখালীর দক্ষিণে দি উইটসে নোয়া চর’; ‘রিকশাঅলা কুসকাই চালা ইস্টিশন যাইয়াম’; ‘আহারে ও কুলসুম কতুন আইলো ডুবাইআলা কইল্লো এ জুলুম’।
মোহাম্মদ হাশেম অধ্যাপনার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ১৯৭০ সালে রেডিও পাকিস্তানের ‘অনুষ্ঠান সংগঠক’ হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু। পর্যায়ক্রমে ঢাকা সংগীত কলেজ, কবিরহাট সরকারি কলেজ, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজসহ দেশের বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। ২০০৫ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর নেন।
সংগীতে আবদুল আলীম ছাড়াও ওস্তাদ বারীন মজুমদারের কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীত, ওস্তাদ আবিদ হোসেন খানের কাছে তত্ত্বীয় সংগীত, ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খানের কাছে তবলায় দীক্ষা নেন। শেষে তিনি নিজ বাসভূমে গিয়ে শুরু করেন শিক্ষকতা ও সংগীত সাধনা।
২০০৫ সালে একুশে বইমেলায় বের হয় এই সাধক পুরুষের গানের প্রথম সংকলন ‘নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান’। ২০১৫ সালে তার রচিত বাছাই করা আড়াই শ গান নিয়ে নির্বাচিত নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান সংকলন বের হয়।
অধ্যাপক মোহাম্মদ হাশেম বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের বিশেষ শ্রেণির গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী ছিলেন। ২০২০ সালের ২৩ মার্চ ঢাকায় মৃত্যু হয় এই শিল্পীর।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি newsbangla24 থেকে পড়ুন